প্রতিটি ভাষারই নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে। আর সেই নিয়মের উপর ভিত্তি করেই ব্যাকরণ রচিত হয়। বাংলা ব্যাকরণ বাংলা ভাষাকে বিশ্লেষণ করে। যে শাস্ত্র বাংলা ভাষাকে ব্যাকরণ বিশ্লেষণ করে তার প্রকৃতি ও প্রয়োগরীতি বুঝিয়ে দেওয়া যায় এবং যার সাহায্যে ভাষা শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা যায়, সেই শাস্ত্রকে বাংলা ব্যাকরণ বলে।
রাচীন কাল থেকেই এ উপমহাদেশের সংস্কৃত ভাষার প্রাধান্য চলে আসছিল। ফলে সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণের সৃষ্টি হয়ে থাকলেও বাংলা ভাষার ব্যাকরণ আলোচনার দিকে সে আমলের প-িতগণ বিশেষ নজর দেননি। আঠার শতকের ত্রিশের দশকে ঢাকার ভাওয়ালে পর্তুগিজ পাদ্রী বাংলা ভাষার দি¦-ভাষিক অভিধান ও খ-িত ব্যাকরণ রচনা করেছিলেন। তখন থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের ভাষাগুচ্ছের গুরুত্বপূর্ণ বাংলা ভাষার প্রতি প-িতদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এবং এর বিশ্লেষণ শাস্ত্র রচনার কাজ শুরু হয়। এরপর প্রায় আড়াই’শ বছর ধরে ভাষাবিজ্ঞানীগণ বাংলা ভাষার বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্লেষণ করেছেন। তার উদ্ঘাটন করেছেন ভাষার রহস্যময় ইতিহাস, আবিষ্কার করেছেন বাংলা ভাষার ধ্বনি, শব্দ ও বাক্যের অসংখ্য সূত্র।
বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে একজন বিদেশী পর্তুগিজ পাদ্রী মনোএল দ্যা আস্সম্মসাও। আজ থেকে প্রায় ২৭১ বছর পূর্বে পর্তুগালের রাজধানী লিসবন নগরীতে রোমান অক্ষরে এ ব্যাকরণ ছাপা হয়। এ বইয়ে তৎকালীন ঢাকা জেলার ভাওয়াল অঞ্চলের প্রচলিত বাংলা ভাষার কিঞ্চিৎ পরিচয় রয়েছে। এর পর ইংরেজি প-িত নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড ১৭৭৮ সালে ইংরেজি ভাষার বাংলা ব্যাকরণ ‘অ এৎধসসধৎ ড়ভ ঃযব ইধহমধষর খধহমঁধমব’ বইটি রচনা করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ১৮০১ কেরি সাহেবের ব্যাকরণ; ১৮১৬ সালে গঙ্গা ভট্টাচার্যের ব্যাকরণ এবং ১৮২০ সালে কীথ সাহেবের ব্যাকরণ রচিত হয়।
১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে বাঙালিদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায় ইংরেজিতে বাংলা ব্যাকরণ লেখেন। তার মৃত্যুর পর ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা ‘স্কুল বুক সোসাইটি’ কর্তৃক ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ নামে এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়। পরর্বতী সময়ে কয়েকজন ইংরেজি প-িত ইংরেজি ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। পরে বাঙালি প-িতগণ ব্যাকরণ রচনায় ব্রতী হন। এসব ব্যাকরণ ইংরেজি ও সংস্কৃত ব্যাকরণের আদর্শের সংমিশ্রণে প্রণীত হয়।
পরবর্তীকালে অনেকেই বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। তাদের মধ্যে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাঁদের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে অনেক প-িত ব্যক্তি বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। বর্তমানে প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণ অনেকাংশে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলোচিত হলেও বাংলা ভাষার পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রচনার এখনও যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। যদিও অনেকেই ব্যাকরণের বিচিত্র সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, তথাপি বাংলা ব্যাকরণ সম্পর্কে কোন শেষ সিদ্ধান্তে পৌছানো সম্ভব হয়নি। অবশ্য কোন ভাষার ব্যাকরণকেই সুনির্দিষ্ট সীমারেখায় আবদ্ধ করে রাখা যায় না। কারণ ভাষা নদীর প্রবাহের মতই গতিশীল। ভাষার পরিবর্তনশীলতার জন্য ব্যাকরণের নিয়ম-কানুনের পরিবর্তন ঘটে।
Bangla Grammer. Downlaod Bangla Grammar app free.